Shubha Jonmodin 2014)- Review (Bengali)
আটলান্টা থিয়েটার ওয়ার্কশপ-এর নিবেদন নাটক “শুভ জন্মদিন”
:: শুভশ্রী নন্দী (রাই)
[শুভশ্রী নন্দী নিয়মিত ভাবে আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল ও অন্যান্য পত্রিকা জন্য লেখেন।]
শীতের কলকাতার অপেক্ষার লিস্টি ফর্দ লম্বা- বইমেলা, যাত্রা, ডোভার লেন সঙ্গীত ইত্যাদি ইত্যাদি । কিন্তু আটলান্টিয়-রা মার্চ মাসের গায়ে লেগে থাকা ছিটেফোঁটা শীত তাড়াতে তাড়াতে অধীর আগ্রহে দিন গুণতে থকে ‘আটলান্টা থিয়েটার ওয়ার্কশপের’ নতুন প্রডাকশন ‘নাটকের মত নাটক’ টি কি?
সেদিন আবার শীতে কুড়িয়ে পাওয়া একঘণ্টাকে, হারিয়ে ফেলার দিন। তবু সময়ের হিসেব নিকেশ সামলে হাজির দর্শকেরা । এবারের নাটক: “শুভ জন্মদিন”। বাংলা ব্ল্যাক কমেডি। লেখক-পরিচালক শ্রীযুক্ত রক্তিম সেন। হট-কেকের মত টিকিট সাবাড় হবার খবর বাতাসে ভাসছিল আগেই। গত দু-বছরের অভিজ্ঞতায় ‘রেড ক্লে থিয়েটার’ হয়ে উঠেছে এখানকার বাঙালী হৃদয়ে “একাডেমী”। ঠোঙায় ভরা মুচমুচে শিঙারা-বেগুনির সাথে গরম চায়ে চনমনে হতে না হতেই, ডাক পড়ল নাটকের সেই বিশেষ ঘণ্টার। এক, দু—ই , তি ——ন। ঝুপ করে নেমে আসলো অন্ধকার। চোখের পাতা আটকে গেল মঞ্চে । মার্চ ৯, ২০১৪, ৪ ঘটিকা । রবিবারের পড়ন্ত বিকেল। পর্দায় এক টিভি শো হোস্ট এর সাথে এক সমাজসেবী লেখিকার সাক্ষাৎকার । সাক্ষাৎকার রে দুটি চরিত্রেরই ছিল ঝরঝরে পরিবেশনা। ফ্ল্যাশব্যাক নিয়ে যায় সরাসরি নাটকে । এই অবতরণ বা ট্রানসিশন্ এর পথ ছিল একান্তই মসৃণ। নতুবা নাটকটির খেই হারানোর সম্ভাবনা ছিল প্রচুর। কিন্তু পরিচালক রাশটি শক্ত হাতে ধরে আমাদের নিয়ে চলেছেন এক শক্তপোক্ত ত্রিভুজ এ- যা অলজাইমার্স আক্রান্ত সুরেন, তার পৌত্র রূপঙ্কর, এবং তার অটিস্টিক দত্তক পুত্র নেপাল কে দিয়ে এই ত্রিভুজ গড়া- এদের কেন্দ্র করেই গোটা গল্প-বিন্যাস ডালপালা মেলে মহীরুহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগাগোড়া নাটকে, পরিচালকের হাতের রাশ কোথাও ঢিলে হয়নি, কোথাও টলমল করেননি চরিত্রেরা।
বাংলায় ব্ল্যাক কমেডির ব্যবহার, সঙ্গীতের প্যাশন ও গবেষণা, অটিজম ও আলজাইমার্স সিমটমের পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরীক্ষণ ও ব্যবহার- এই সংক্রান্ত বুৎপত্তির শাখাপ্রশাখা এই নাটকটির ‘বিষয়’ কে ‘বিশেষ’ করে তুলেছে তো বটেই, সাথে যত্নে বোনা গল্পটিকে করে তুলেছে শিল্প। বিশেষত: শুরুতে প্রথম দৃশ্যে যেখানে নেপাল তুলিকা বসুকে ‘শূন্য’ ধারনাটি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে যে ব্লকগুলির ব্যবহার করে প্রায়োগিক বিশ্লেষণ করেছে, সেটি মূলতই অটিস্টিক ছাত্রদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
নাটকের তিনটি ক্ষেত্রে ‘মনোলগ’ ব্যবহার করা হয়েছে। বিবৃতিতে কোথাও কোনো একঘেয়েমির ছোঁয়া নেই । নারী চরিত্র দুটি ঘটনার বিবরণে আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি নির্লিপ্তি বজায় রেখেছে যাতে কোনরকম ‘অতি’ এসে দর্শকের মনে পৌছনোয় ব্যাঘাত ঘটিয়ে পথরোধের কারণ হয়ে দাড়ায় নি । দুটি মোনোলগ ছিল তুলিকা বসু ও সুজাতার মুখ দিয়ে- তৃতীয়টি খুবই তাৎপর্য-বহুল । শেক্সপীরীয় বা দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের নাটকের ‘মেলোড্রামাটিক ঢঙে’ অথচ আধুনিক জীবনের বর্তমান যুগোপযোগী সমস্যার নিরিখে রচিত ‘সংলাপে’র এক সফল ‘কাব্য-বাস্তব’ মেলবন্ধন ঘটিয়ে নাট্যকার প্রমাণ করেছেন যে লেখনীর হাটখোলা দরজা দিয়ে নাটকের উঠোনে তার বিচরণ কত স্বচ্ছন্দ । এইখানেই তার অভিনয়ের ক্ষমতা ও কলমের শক্তি সব্যসাচী পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে।
দৃশ্য এক এ দেখা গেল, পিয়ানো বাজনারত সুরেনকে। দর্শকের দিকে তার পিঠ, অথচ বাজনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ- গ্র্যান্ড পিয়ানোর উপস্থিতি বলে দেয়, নাটকের মূল স্রোত ধরে বয়ে আছে সঙ্গীতের মূর্ছনা, এবং সেই থেকে শুরু একের পর এক চরিত্রের, নিজস্ব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘শরীরী ভাষা’ ও ‘ম্যানারিজম’ কে কাজে লাগিয়েছেন পরিচালক । ন্যাপ্লার মুদ্রাদোষ, পুলিনের ছোটখাটো মুখভঙ্গির কাজ, গদায়ের চোয়ালের অভিব্যক্তি, মা-বাবার অবর্তমানে অপত্য যত্নে বঞ্চিত রূপঙ্করের মানানসই সংলাপ ও অল্পবয়সী ছেলেদের পদচারণার ছটফটানি, পিয়ানো বাজানোয় সুরেনের পিঠ ও কব্জির কাজ, লাঠির ওপর আঙ্গুলের ছটফটানি, অস্থিরতায় পা নাড়ানো- এই সমস্ত ডিটেল নাটকটিকে দর্শক চোখে বিশ্বাসযোগ্য করে কানেক্ট করতে সাহায্য করেছে। এমনকি সুরেন ও রূপঙ্করের বয়সের ব্যবধান ও বাস্তব হয়ে উঠেছে সেই একই কারণে। তবে সংযত মেক-আপ কে এখানে বাহবা না দিলেই নয়। অসংযত মেক-আপ অভিনয়ের রস হানি ঘটাতে পারত ।
সুরেনের পুত্রবধূ চরিত্রটি ফুটে উঠেছে আরও ভালো, যেখানে অভিনেত্রী গতানুগতিকতা থেকে বেড়িয়ে এসে চরিত্রটির মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করতে পেরেছে । সুরেনের মধ্যম পুত্রকে এর আগে ভিলেনের চরিত্রে দেখা যায়নি বড় , সেই চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলায় সে ছিল একান্ত সফল । কনিষ্ঠ পুত্রের ব্যক্তিত্ব ও চেহারায় ইতিপূর্বে বিভিন্ন মঞ্চে তাকে ‘রাজা’ হিসেবে দেখা গিয়েছে বারবার । কিন্তু এই নাটকে স্ত্রী ও দাদার ( শুভ অশুভের) টানাপড়েন এ একটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় split ব্যক্তিত্ব তিনি ফুটিয়েছেন সুন্দর।
একটা রহস্যের আবহও গল্পটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে । এই গল্পে রহস্য উন্মোচন, একটা ইন্টেলেক্ট রিফ্লেক্ট করেছে, সেই উন্মোচন নিছক সাদামাটা গোয়েন্দা-কাহিনীর স্টাইল এ নয়, সুরেনের পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত অনুরাগ, ন্যাপার এস্পারগার (হাইলি ফাংশনাল অটিজম) এ মিউসিক থেরাপি সাথে, একটি বিশেষ দিকে এরা যে স্কিল্ড্ হয় তা প্রমাণ করা ‘পারফেক্ট পিচ’ দিয়ে এবং সেটির প্রয়োগ ফোন নাম্বার উদ্ধারের কাজে- সব মিলিয়ে এই ইনটেলিজেন্ট গল্পটির বুনন কে প্রশংসা না করে পারা যায় না।
সেট ডিজাইনে শত-ছিদ্র দেয়ালের ফুটিফাটা, আলোতে শেষ দৃশ্যের তারা খচিত আকাশ, প্রপস-এর খুঁটিনাটি, চরিত্রানুযায়ী মানানসই পোশাক-আশাক, মনে দাগ রেখে যাওয়ার মত সিনেমাটোগ্রাফি, উন্নতমানের শব্দ ও সুর প্রযোজনা, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা, সর্বোপরি অভিনেতা অভিনেত্রীদের সকল চরিত্রের উৎকৃষ্ট অভিনয় ও পেশাদারী পরিচালনা নাটকটিকে একটি তাক লাগানো অথচ মন ছোঁয়ানো ব্যতিক্রমী প্রডাকশন করে তুলেছে।
সমালোচনার চশমা চোখে গলালে, চাঁদের গায়েও কিছু দাগ খোঁজার দক্ষতা অর্জন দায়িত্ববোধের মধ্যে এসে যায়।
Play Reviews
Chor (2019)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
DenaPaona (2019)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Baro Pishima (2018)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Dui Hujoorer Goppo (2017)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Ballabhpurer Roopkatha (2013)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Ballabhpurer Roopkatha (2013)- Review (English)
:: Dr. Soumitra Chattopadhyay
Two Plays (2011)- Review (English)
:: Abir Thakurta