Ballabhpurer Roopkatha (2013)- Review (Bengali)
আটলান্টা থিয়েটার ওয়ার্কশপ-এর নিবেদন – বাদল সরকারের ‘বল্লভপুরের রূপকথা’
:: শুভশ্রী নন্দী (রাই)
[শুভশ্রী নন্দী নিয়মিত ভাবে আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল ও অন্যান্য পত্রিকা জন্য লেখেন।]
২রা মার্চ, নাট্য-সন্ধ্যা। নিবিড় ঘন অন্ধকার ঘর। পাতা পড়লে শব্দ হয়- এমন চুপচাপ। টান টান হয়ে বসে তন্ময় দর্শক। একেই হয়ত বলে থিয়েটারের দর্শক। মঞ্চস্থ হচ্ছে বাদল সরকারের “বল্লভপুরের রূপকথা” – পরিচালনায় শ্রীযুক্ত রক্তিম সেন। আটলান্টা থিয়েটার ওয়ার্কশপের তৃতীয় প্রযোজনা। আটলান্টার বাঘা বাঘা অভিনেতাদের নিয়ে দাপুটে অভিনয়। বিরতিতে অপেক্ষা করছে সিঙারা-বেগুনি-চা। একমুহুর্তের বিহ্বলতা মনে পড়াল বহুদূর থেকে হাতছানি দেওয়া ‘একাডেমি’ … আসন জোড়া টিপিক্যাল নাট্য-প্রেম … বিরতিতে চপ- ভাড়ে চা …
আটলান্টায় এ ‘গৌরব’ এনে দেবার জন্য কোনো সাধুবাদই যথেষ্ট নয় পরিচালকের জন্য। নাটক শেষে যখন বেরুচ্ছি, দেখা গেল মঞ্চায়নের সাফল্য নিয়ে কোনো মতদ্বৈততা দর্শকদের মধ্যে নেই। আবালবৃদ্ধবনিতা এক ভালো লাগার আবেশ নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, জানিয়েছেন তাদের নিজস্ব ভাষায়। এই নাটকে যেমনি বারো থেকে ১৪ বছরের খুদে দর্শকরা পেয়েছে আনন্দের রসদ, তেমনি নাটকের স্ট্রাটেজিক দিক নিয়ে মাথা ঘামান এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ খোজেন যে দর্শক, তারাও পেয়ে যান মনের খোরাক।
স্টেজ সেট আপ এ ক্ষয়িষ্ণু রাজবাড়ীতে ইট বেরোনো দেওয়াল, পূর্বপুরুষদের প্রতীকি তৈলচিত্র, ঝাড়বাতি হিসেবে প্রতীকি যে আলো ব্যবহার হয়েছে (অতিথি আপ্যায়নের উপলক্ষ্যে ) সবেতেই ছিল সুরুচি, সুচিন্তিত ভাবনা, মাত্রা জ্ঞান ও এন্টিক বিষাদময় হারানো সুরের আভাস। প্রপস, পোশাক সবই ছিল সঙ্গতি রেখে সংযত।
সঙ্গীত ও আলো ব্যবহার যে কোনো সৌন্দর্য পিপাসুদের aesthetic সেন্স এর স্বাদ মেটায় পরিপূর্ণতায়। বোদ্ধা দর্শকের চোখে অনায়াসে ধরা পড়ে যে পরিচালক শুধু আলো ও সঙ্গীতের ব্যবহার জানেন না, তিনি যথার্থ অর্থে তা বোঝেন। সম্যক জ্ঞান রয়েছে তার বিষয়টিতে। নতুবা সংস্কৃত যে পংক্তিগুলো বিশেষভাবে বাছা হয়েছে, যেভাবে সুরারোপ করা হয়েছে, যে আঙ্গিকে রঘুপতিকে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছে, এবং তার ‘ইকো’ বা প্রতিধ্বনি ব্যবহার শুধু মার্জিত ছিল তাই নয়, একটা আত্মার কন্ঠের হাহাকার-বন্দনায় ভারতীয় সঙ্গীত-ঐতিহ্য, দর্শন, ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের মূর্ছনা- যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল। এখানেই নাটকটির আপাত হাস্যরসের আড়ালে করুন রসও স্পষ্ট। এখানেই রঘুদার কন্ঠস্বর যেন হয়ে ওঠে পুরো হতছিন্ন বাড়িটির আত্মা।
ক্ষয়িষ্ণু রাজবাড়ী ধ্বসে পড়লেও ভুয়ো অহংকারের আলোয়ান, ঠাট বজায় রাখার ব্যর্থ চেষ্টায় অসহায় ভূপতি বা মনোহর শুধু একটি চরিত্র নয়, তারা একটি যুগ ইঙ্গিত করে, যে সময় থেকে শিল্পায়ন, প্রমোটার কালচার উঠে এসে জুড়ে বসেছে, সভ্যতার জীবন-পাচিল ফুঁড়ে। ‘বাদুর-চামচিকে-ভূত’ এই আপাত মজার phrase-এর আড়ালে আমরা হারাচ্ছি আমাদের অনেক “অতীত”। হালদারের ১০ হাজার-২০ হাজার টাকার হাকের সামনে, ভূপতির বিহ্বল-ভাবলেশহীন চোখের অভিব্যক্তি, চেহারা- যে কোনো দর্শকের মনে দীর্ঘদিন ছাপ রেখে যাবে। ‘loud’ ও ‘কন্ট্রোল্ড’- যার ভূমিকা যেমন ছিল, প্রত্যেকটি অভিনেতা-অভিনেত্রী তাদের স্বক্ষেত্রে উজ্জ্বল, সবাক ও সতেজ।
এক্ষেত্রে পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তাদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও বাচনভঙ্গি এত ভালো করে নখদর্পনে পর্যালোচনা করেছেন, যে তাদের নিজেদের ভাঙচুর করে বেড়িয়ে না এসে, তাদের নিজস্ব বাচনভঙ্গি-স্টাইল একই রেখে, নির্য্যাস টুকু নিংড়ে নিয়ে, নাটকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চরিত্রগুলোকে মানানসই করে নেয়ায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অসাধারণ স্মার্টনেস্ ও মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন। এ একমাত্র দীর্ঘ পরিচালনার অভিজ্ঞতারই ফসল।
স্টেজ প্লেসমেন্ট অর্থাত স্টেজ জুড়ে কখন কোন জায়গা ব্যবহার করলে, কোন এঙ্গেল এ আলো ফেললে নাটকটি দর্শক চোখে সুখদৃশ্য হবে, সেদিকেও রাখা হয়েছে প্রখর নজর। সর্বক্ষেত্রে নাটকটির ডিটেল, দৃশ্য- নির্বাচন, পরিকল্পনা, পরিবেশনা, পরিচালনা ও অভিনয়ে আগাগোড়া ছিল অত্যন্ত পেশাদারী মনোভাব।
তবে নাটকটির মূল সাফল্যের চাবিকাঠি নিহিত ছিল ‘ব্যালান্স’ বা ‘ভারসাম্যতায়’। হাসির নাটকে সূক্ষতা বজায় রেখে ‘মাত্রা’ ঠিক রাখা খুব কঠিন কাজ। পরিচালকের দক্ষ হাতের পরিচালনা নির্দ্বিধায় নাটকটিকে ‘সঠিক’ পথে নিয়ে যেতে পেরেছে।
গত গ্রীষ্মে একাডেমিতে কল্পায়ুর ‘চলমান অশরীর’, কৌশিক সেনের ‘ম্যাকবেথ’ দেখার পর, আটলান্টায় এই ধরনের উচু মানের নাটক দেখা একটা ধারাবাহিকতা মনে হয়েছে। পিতার মৃত্যুদিবসে নাটক নির্বাচনের দিনটিও সঠিক মনে হয়েছে, যেহেতু যেকোনো শিল্পীরই দুক্ষ-ও বেদনার যথার্থ মুক্তি ঘটে সৃষ্টিতেই।
নাটকটি উপভোগ করার সময়, সতর্ক চোখে ছিল, weakest লিঙ্ক খোজার তাগিদ। কোনো যুতসই শক্তপোক্ত খুত ধরার অবকাশ এই নাটক রাখে নি। তবে সমালোচকের কাজ ই তো ‘মিসিং লিংক’ বার করা। নতুবা সে সমালোচনা না হয়ে প্রশস্তির দোষে দুষ্ট হতে পারে। দুটি কথা মনে হলো- যখন ভূপতি ও মনোহর বিড়ি ও সিগেরেট নিয়ে কথোপকথন চালাচ্ছিল, তখন ঘরের কোণে অব্যবহারে মরচে ধরা দুয়েকটি ‘হুকো’ পড়ে থাকলে মন্দ হত না। আরেকটি অন্য স্বাদের কথা মনে এলো- আকাদেমির মত তিনটি এলার্ম ঘন্টা বাজিয়ে যদি নাটকটি শুরু হত, তবে বেশ ভালো হত। এক্ষেত্রে পরিচালক যখন শব্দ-কারিগরও তখন এ প্রকল্প হয়ত কষ্টসাধ্য হবে না। আগামী প্রডাকশন-এ সেটি শুনলে, নাট্য প্রেমীরা শুধু নাট্য-উপভোগ করবেন না, ভারতীয় নাট্য-ধারা, নাট্য আন্দোলন কে স্মরণ করে নস্টালজিকও হবে।
পরবর্তী নাটক ‘কি কবে কোথায়’ জানার আগ্রহে উচাটন নাট্য প্রেমী মাত্রেই থাকবেন, এ বলার আর অবকাশ থাকে না।
Play Reviews
Chor (2019)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
DenaPaona (2019)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Baro Pishima (2018)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Dui Hujoorer Goppo (2017)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Shubha Jonmodin 2014)- Review (Bengali)
:: Subhasree Nandy (Rai)
Ballabhpurer Roopkatha (2013)- Review (English)
:: Dr. Soumitra Chattopadhyay
Two Plays (2011)- Review (English)
:: Abir Thakurta